ঘটনাচক্রঃ গত চার বছর আগে আরিফ ভালোবেসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন স্মৃতিকে। বিয়ের পর থেকে বউকে নিয়ে নিজের পরিবারের সঙ্গে বগুড়া শহরে থাকতেন তিনি। আরিফের অভিযোগ, বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই স্মৃতির ব্যবহার খুব খরাপ হয়ে যায়। কথায় কথায় জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া, গালিগালাজ। শুধু তাই নয় খারাপ ভাষায় কথা বলতেন আরিফের অসুস্থ মায়ের সঙ্গেও। এদিকে স্ত্রীর অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতেন আরিফ। বেশ কয়েকবার ঝগড়া করে পিতার বাসায় চলে যায় স্মৃতি। বায়না ধরেছিলেন আলাদা থাকবেন আরিফের সঙ্গে।
বিয়ের এক বছর পর তাদের সন্তান হয়। এরই মধ্যে আরিফ সৌদি আরব চলে যান। তখন তাঁর স্ত্রী নিজের পিতার বাসায় ছিলেন। কিন্তু কাগজপত্রের ঝামেলার দরুন একবছরের মধ্যে ফিরে আসতে হয় আরিফকে। তখন টাকার জন্য প্রতিনিয়ত ঝগড়া করতেন তার স্ত্রী; মাঝেমধ্যে মারধরও করতেন স্বামীকে। তবে নারী নির্যাতনের মামলার ভয়ে কখনও স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেননি আরিফ। স্ত্রীকে সামাল দিতে না পেরে শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন ছয় মাস। কিন্তু স্ত্রী অপমান করে বের করে দিলে বন্ধুর সঙ্গে মেসে উঠেন। স্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে না থকলেও নিজের সন্তানের জন্য সাধ্যমতো টাকা পাঠাতেন তিনি।
একদিন আরিফ তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন। বাসায় ফিরে কয়েকদিনের মধ্যেই স্মৃতি আবার ঝগড়া করেন এবং নিজেকে আঘাত করে থানায় আরিফ ও তার পরিবারের অন্য সবার বিরুদ্ধে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন’ আইনে মামলা করেন। ৪ মাস জেলে থাকার পর জামিনে বের হয়ে এখন আরিফ তাঁর মায়ের সঙ্গে এসেছেন বগুড়ার মানবাধিকার সংস্থার সহায়তা পাওয়ার আশায়।
আসলে, নারী নির্যাতনের খবর ফলাও করে প্রতিদিন টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হলেও অজানা থেকে যায় পুরুষ নির্যাতনের অধ্যায়। বিবাহিত পুরুষদের মধ্যে কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক বা আর্থিক, আবার কেউ সামাজিক ভাবে রোজ নির্যাতিত হচ্ছেন। ঘরে বাইরে এ ধরণের নির্যাতন প্রায়ই ঘটছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের যুব সমাজের ওপর আচরণগত বেইজ লাইন সার্ভে শীর্ষক গবেষণার তথ্যমতে, বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ষাটের দশকের তুলনায় বর্তমানে নারীদের বিবাহবহির্ভূত ও বিবাহপূর্ব অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পরিমাণ তিনগুণ বেশি।
বর্তমানে প্রতি ১০ জনের প্রায় ৪ জন নারী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই স্ত্রীর পরকীয়াসহ নানান কারণে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এদিকে দেশে পুরুষ নির্যাতনের আলাদা কোন আইন নেই। সাধারণ ফৌজদারি আইনেই এটি প্রক্রিয়ামান। অর্থাৎ যেভাবে নারীরা পুরুষের বিরুদ্ধে সরাসরি নির্যাতন মামলা করতে পারে ঠিক একইভাবে পুরুষরা নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের সরাসরি কোন মামলা করতে পারে না, ফৌজদারি দন্ডবিধির মারপ্যাঁচে বাধাগ্রস্ত হয়।
আবার অন্যদিকে বেশীরভাগ নারীরা ‘নারী নির্যাতন আইন’র অপব্যবহার করে পুরুষকে করে রেখেছে তাদের অনুগত ভৃত্য। এসব প্রতিরোধে সচেতনতা এবং প্রতিরোধের অভাবে উৎপীড়ন, নিপীড়ন ও নির্যাতন পুরুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু লোকলজ্জা ও সামাজিক মূল্যবোধের কারণে অজানা থেকে যায় এসব লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর স্ত্রী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের কাহিনী। আবার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রচলিত আইনের সুযোগে পুরুষকে ফাঁদে ফেলছেন কোন কোন নারী। অনেক পরিবারে নারী কর্তৃক পুরুষ প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়ে চলছে যা দু’একটি ঘটনা ছাড়া প্রকাশিত হয় না।
নারীদের নির্যাতন নিয়ে জোর গলায় কথা বলছেন, প্রায়ই রাজপথে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করছেন। কিন্তু যিনি বাইরে বেরিয়ে এসে নারীদের উন্নয়নের কথা, নির্যাতনের কথা বলছেন, সেই বক্তাও কিছুক্ষণ আগে তাঁর স্ত্রীর হাতে মারধর কিংবা মানসিক সহ কোন না কোন ভাবে নির্যাতিত হয়ে এসেছেন। তিনি হয়তো নারী নির্যাতনের পক্ষে কথা বলছেন আর নিজের নির্যাতনের কথাটি ভেবে নিরবে কেঁদে যাচ্ছেন।
আপাতদৃষ্টিতে আইনের অধিকার সকলের জন্য সমান; আইন অন্ধ, আইন নারী পুরুষ বিচার করে না। তাহলে নারী নির্যাতন বিরোধী আইনে শুধু পুরুষকে কেন সাজা দেওয়া হবে? যে অন্যায় করলে পুরুষকে সাজা দেওয়া যাবে সেই একই অন্যায়ের জন্য নারী থাকবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে তা কখননোই কাম্য হতে পারে না।
তাই ‘নারী নির্যাতন আইন’র ভারসাম্য রক্ষার্থে একটি আলাদা ‘পুরুষ নির্যাতন আইন’ প্রণয়ন ও পাশ করা এখন সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সঠিক প্রস্তাবনা