শারদীয় দূর্গাপুজা উদযাপন উপলক্ষে সরকারের অনুদান থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে উপজেলার মানিকদিপা হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক নারী-পুরুষ।
এ সময় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেফাজত আরা মিরা বিক্ষোভকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা পারভীন গাড়ী নিয়ে পাশ কেটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা ইউএনও’র গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিবেশ শান্ত করে।
২১ অক্টোবর বুধবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্তরে এই ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, মানিকদিপা হিন্দুপাড়া শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ পুজামন্ডপ একটি পুরাতন পুজামন্ডপ। প্রতিবছর তাঁরা উৎসব আনন্দের মধ্য দিয়ে পুজা উদযাপন করেন। কিন্তু প্রশাসন তাদেরকে সরকারী অনুদান থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। গত বছরও তাদেরকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে অনেক কষ্টে অনুদান পেয়েছেন। এবার লিখিত আবেদন দেয়ার পরও সরকারী অনুদান থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনুদান না পেলে প্রয়োজনে প্রতিমা বিসর্জন না দিয়ে ইউএনও অফিসের সামনে রেখে যাবেন বলে জানান তাঁরা।
মানিকদিপা হিন্দুপাড়া শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ পুজামন্ডপ কমিটির সভাপতি মনোরঞ্জন চন্দ্র জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকারী অনুদানের জন্য ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এরপর অনুদানের জন্য পাঁচবার ইউএনও অফিসে ধর্ণা দিয়েছেন। প্রতিবারই ইউএনও অসদাচারন করেছেন। এমনকি বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন। সব শেষে তাদেরকে অনুদান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অনুদান থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি জানালে তাঁরা ইউএনও’র সুপারিশ চান। কিন্তু ইউএনও কোন সহযোগীতা না করায় বাধ্য হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বুধবার ইউএনও অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকালে ইউএনও তাদেরকে দেখার পরও না দেখার ভান করে পাশ কেটে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা ইউএনও’র গাড়ীর সামনে বেরিকেট দিয়ে অবরুদ্ধ করেন এবং সরকারী অনুদান প্রদানের দাবী জানান।
অপরদিকে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়ার পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন করেন ইউএনও মাহমুদা পারভীন। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নু এবং থানার অফিসার ইনচার্জ আজিম উদ্দীন। তাঁরা অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে মর্মে আশ্বস্ত করলে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন।
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ শাজাহানপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নীরেন্দ্র মোহন সাহা জানান, প্রতিবছর শাজাহানপুর উপজেলায় ৫৪টি মন্ডপে পুজা উদযাপন করা হয়। অজ্ঞাত কারণে গত বছর থেকে মানিকদিপা রাধা গোবিন্দ পুজামন্ডপের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। গত বছর অনেক চেষ্টা করে তাদেরকে অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এবারও ইউএনও থেকে শুরু করে ডিসি অফিস পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা পারভীন জানান, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ৫৩টি পূজামন্ডপের তালিকা দিয়েছেন। ওই তালিকায় মানিকদিপা রাধা গোবিন্দ পূজামন্ডপের নাম না থাকায় তাঁরা অনুদান পায়নি। এছাড়া গত মঙ্গলবার মানিকদিপা রাধা গোবিন্দ পূজামন্ডপের আবেদন পাওয়ার পর সুপারিশ সহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply