প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার শেষ ভাগে এসে যুক্ত ইন্টার্নশিপ (শিক্ষানবিশি) প্রোগ্রাম। মহামারির এই সময়ে যেহেতু থেমে নেই পড়াশোনা, তাই থেমে নেই শিক্ষানবিশিও। দেশি-বিদেশি নামীদামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরাও ঘরে বসেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। ঘরে বসেই নিচ্ছেন কর্মক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা।
জুলাই মাসের শুরু থেকে ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক। প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ, বিপণন, ফিন্যান্স, আইটিসহ বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। দুই মাসব্যাপী তাঁদের এই শিক্ষানবিশি প্রোগ্রামে কাজ করছেন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থী।
সাত হাজারের বেশি আবেদন থেকে একাধিক বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় এই শিক্ষার্থীদের। তাঁদেরই একজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চৌধুরী ওয়াফী। বাংলালিংকের বিপণন বিভাগে শিক্ষানবিশি করছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির অন্য সব কর্মীর মতোই সকাল নয়টা থেকে কাজ শুরু হয়ে যায় তাঁর। কাজের ফাঁকে ক্লাসের সময়টুকুতে ছুটি পান বলে জানান তিনি। ওয়াফী বলেন, ‘আমি মার্কেট রিসার্চ করছি, বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে কথা বলছি, প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নতুন নতুন আইডিয়া উপস্থাপন করছি। ছাত্র হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি এত কাজের সুযোগ পাব বলে আশা করিনি। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, মার্কেটিং ছাড়াও সাপ্লাই চেইন বা ফিন্যান্সসহ অন্য বিভাগগুলোতেও আমি বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।’
নিজেদের কাজের গণ্ডির বাইরেও অনলাইন উপস্থাপনা, অনলাইন সভা, সাইবার নিরাপত্তার মতো প্রযুক্তিগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও শিক্ষানবিশেরা জানতে পারছেন বলে জানান বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের ট্যালেন্ট অ্যাকুইজিশন লিড তানজিনা গিয়াস। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট বা প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা ছাড়া ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপের অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেগুলো হয়তো অফিসের প্রচলিত ইন্টার্নশিপে সম্ভব হয় না। যেমন অফিসে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটে সময় নষ্ট হচ্ছে না। সবাই যেহেতু বাড়িতে বসেই কাজ করছে, সেহেতু সবাই স্বাচ্ছন্দ্যমতো কাজ করতে পারছে। ফলে আমরাও ভালো কাজ পাচ্ছি।’
শিগগিরই দ্বিতীয় ব্যাচে ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপের জন্য আহ্বান জানাবে বাংলালিংক। আবেদনের জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও লিংকডইন পেজে চোখ রাখতে হবে।
২০ আগস্ট থেকে ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপের প্রথম ব্যাচ শুরু করতে যাচ্ছে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন মাসব্যাপী এই ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে।
আইডিএলসির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আখতারুদ্দিন মাহমুদ জানান, করোনা মহামারির শুরুতে তাঁদের কাজের চাপ কিছুটা কমে আসে। এই সময়কে কাজে লাগাতে তাঁরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগযোগ শুরু করেন। জানতে পারেন মহামারির এই সময়েও শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার জন্যই ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপের উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। অনলাইনে চার হাজারের বেশি আবেদন থেকে বাছাই করে চূড়ান্তভাবে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
আখতারুদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপ হলেও শেখার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি থাকবে না। কেননা, শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে মেধাবী ও অভিজ্ঞ কর্মীদের অধীনে কাজ শেখার সুযোগ পাবেন। এতে তাঁদের সিভিতে অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারী হবে। অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিদের কাছ থেকে হয়তো আমরাও নতুন কিছু শিখতে পারব।’
মাসব্যাপী এই ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা শিক্ষানবিশ ভাতা হিসেবে আট হাজার করে টাকা পাবেন। ভার্চ্যুয়াল ইন্টার্নশিপের প্রথম ব্যাচের সফলতা পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে আবারও ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শুরু করবে আইডিএলসি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হয়তো এভাবেই ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোও ঘরে বসে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে। ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ মেয়াদি এসব ইন্টার্নশিপ থেকে অনেক সময় বাড়তি আয় করার সুযোগও থাকে। আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে তাদের ওয়েবসাইট ও লিংকডইন পেজ থেকে।
Leave a Reply